মুসলিম আইনে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ 

স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক প্রদান

বাংলাদেশে তালাক ও বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়ে পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এবং মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪-এ সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। 

একজন পুরুষ নিজে বা নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তালাকের নোটিশ প্রেরণ করে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করতে পারেন। তবে ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ এর ধারা ৭(১) অনুযায়ী স্ত্রীকে মৌখিকভাবেও তালাক দেওয়া যেতে পারে। উভয় ক্ষেত্রে অবশ্যই তালাক প্রদান সংক্রান্ত একটি লিখিত নোটিশ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবর প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যেটি প্রতিপালিত না হলে উক্ত আইন অনুযায়ী একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। 

উপরোক্ত নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান বা মেয়র পক্ষদ্বয়ের মধ্যে সমঝোতা করার উদ্দেশ্যে একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবেন এবং সালিসি পরিষদ এই ধরনের আপোষ মীমাংসা ঘটাতে প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। 

উপরোক্ত নোটিশ চেয়ারম্যান বা মেয়র কর্তৃক প্রাপ্ত হওয়ার দিন থেকে ৯০ (নব্বই) দিনে অতিবাহিত হলে তালাক কার্যকর হবে। ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে তালাক প্রত্যাহার করার সুযোগ রয়েছে

তবে তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী হলে তার গর্ভাবস্থা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।

স্ত্রী কর্তৃক তালাক প্রদান

স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক প্রদান করতে পারেন যদি বিবাহের কাবিন-নামায় স্বামী কর্তৃক তালাকের ক্ষমতা স্ত্রীকে অর্পণ করা হয়ে থাকে। এই ধরনের তালাক, যা তালাক-ই-তাফউইজ নামে পরিচিত, উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে স্ত্রী কর্তৃক প্রদান যায়

যদি স্বামী তালাক প্রদানের অধিকার স্ত্রীকে অর্পণ না করে থাকেন, তাহলে বিবাহিত একজন মহিলা মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯-এর -এ বর্ণিত কারণ সমূহের জন্য বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রি দাবী করে মামলা দায়ের করতে পারেনআইনে উল্লেখিত বিবাহ বিচ্ছেদ কারণগুলো নিম্নরুপ:

- স্বামীর হদিস চার বছর ধরে জানা যায়নি;

- স্বামী অবহেলা করেছেন বা দুই বছর ধরে তার ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন;

- স্বামী মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর বিধান লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করেছেন;

- স্বামীকে সাত বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে;

- স্বামী যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই তিন বছরের জন্য তার বৈবাহিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন;

- বিবাহের সময় স্বামী পুরুষত্বহীন ছিল এবং তা অব্যাহত আছে;

- স্বামী দুই বছর ধরে উন্মাদ বা কুষ্ঠ রোগে ভুগছেন বা যৌন রোগে ভুগছেন;

- যে তাকে তার পিতা বা অন্য অভিভাবকের দ্বারা তার আঠারো বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে, উনিশ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে বিবাহ প্রত্যাখ্যান করেছেন:

- স্বামী তার সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করে, অর্থাৎ-

(ক) অভ্যাসগতভাবে তাকে লাঞ্ছিত করে বা আচরণের নিষ্ঠুরতার দ্বারা তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে যদিও এই ধরনের আচরণ শারীরিক দুর্ব্যবহারের পরিমান না হয়, অথবা

(খ) খারাপ খ্যাতিসম্পন্ন মহিলাদের সাথে মেলামেশা করে বা কুখ্যাত জীবনযাপন করে, অথবা

(গ) তাকে একটি অনৈতিক জীবনযাপন করতে বাধ্য করার চেষ্টা করে, অথবা

(ঘ) তার সম্পত্তি নিষ্পত্তি করে বা তার উপর তার আইনি অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়, বা

(ঙ) তাকে তার ধর্মীয় পেশা বা অনুশীলন পালনে বাধা দেয়, বা

(চ) যদি তার একাধিক স্ত্রী থাকে, কোরানের আদেশ অনুসারে তার সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ না করে;

- অন্য কোনো কারণে যা মুসলিম আইনের অধীনে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য বৈধ হিসাবে স্বীকৃত।

২০২৩ সালের পারিবারিক আদালত আইনের অধীনে পারিবারিক আদালতে স্ত্রী কর্তৃক বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য মামলা দায়ের করতে পারবেন।

তালাকের নিবন্ধন

স্বামী বা স্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত তালাক মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪ এর ৬ ধারা অনুযায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।

নিবন্ধনের জন্য আবেদন মৌখিকভাবে করা যেতে পারেযদি নিকাহ রেজিস্ট্রার বিবাহবিচ্ছেদ নিবন্ধন করতে অপারগতা প্রকাকরেন সে ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন তিনি রেজিস্ট্রারের নিকট আবেদন করতে পারেন। 

তালাক ও বিবাহবিচ্ছেদ

তালাক ও দেনমহোর প্রদান সংক্রান্ত আইন