গ্রেফতার, রিমান্ড ও জামিন
হাইকোর্ট কখন ফৌজদারি অপরাধে জামিন প্রদান করে থাকে?
কোন ব্যক্তি পুলিশ কর্তৃক ধৃত হওয়ার পর তাঁকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ২৪ (চব্বিশ) ঘণ্টার মধ্যে উপস্থিত করার বাধ্যবাধকতা আইনে রয়েছে। ধৃত ব্যক্তি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট জামিনের আবেদন করতে পারেন।
পুলিশ যদি মনে করে ধৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে এবং ঘটনার সহিত জড়িত অন্য ব্যক্তিকে ধৃত করার জন্য অথবা অপরাধের আলামত উদ্ধার করার জন্য ধৃত ব্যক্তির রিমান্ড প্রয়োজন সে ক্ষেত্রে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করতে পারে। আদালত রিমান্ডের আবেদন উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করলে গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে তাঁর জামিনের দরখাস্ত নামঞ্জুর করে পুলিশ রিমান্ডে প্রেরণ করতে পারেন। অবশ্যই। পুলিশ রিমান্ডের মেয়াদ কোনও ভাবেই ১৫ (পনেরো) দিনের বেশি হতে পারবে না।
ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিনের বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। সাধারণত জামিনযোগ্য মামলা হলে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামীকে যেদিন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট উপস্থিত করা হচ্ছে সেদিনই তাঁকে জামিন প্রদান করতে পারেন। যে অপরাধে আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটি যদি জামিন অ-যোগ্য ধারা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রেও আদালত জামিন প্রদান করতে পারেন।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারা মোতাবেক যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা ১২০ দিনের মধ্যে তদন্তকারী শেষ করতে না পারে সে ক্ষেত্রে আদালত অপরাধটি যদি মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা অন্যূন ১০ বছর সাজার কোনো মামলা না হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন প্রদান করতে পারেন।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনে আসামির জামিন পাওয়ার কোন অধিকার সৃষ্টি করা হয়নি। যে কোন ফৌজদারি মামলায় আদালত জামিন প্রদান করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে থাকে সেগুলো হচ্ছেঃ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন প্রদান করা হলে তাঁর পলায়নের সম্ভাবনা রয়েছে কি না? তা ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন পাওয়ার পরে পুনরায় অপরাধে জড়িত হওয়ার বা সাক্ষীদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা বা। মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ বিনষ্ট করার কোন সম্ভাবনা আছে কি না? এ ছাড়া। আদালত আসামির চারিত্রিক ও পূর্ব ইতিহাস বিবেচনায় নিয়ে জামিন প্রদান করে থাকেন।
জামিনের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ থেকে ৪৯৯ ধারায় বিধান রয়েছে। জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন প্রদানের এখতিয়ার সম্পর্কে ৪৯৬ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।
জামিন অ-যোগ্য অপরাধ হলেও জামিন প্রদান করতে পারেন আদালত। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যদি আদালতে সন্তুষ্ট হন যে অভিযুক্ত ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ড হতে পারে সে ক্ষেত্রে আদালত তাকে জামিন প্রদান থেকে বিরত থাকতে পারেন ৷। এছাড়াও ১৬ (ষোল) বছরের কম বয়সী কোন ব্যক্তি, মহিলা অথবা অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে জামিন প্রদানের বিষয়ে উক্ত ধারায় বলা হয়েছে।
জামিন প্রদান করা হলে বেইল বন্ড বা জামিন-নামা দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৯ ধারায় বেইল বন্ডের পরিমাণ এবং উপযুক্ত জামিনদারের বিষয়ে আদালত সন্তুষ্ট সাপেক্ষে যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
কোনও ব্যক্তি ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হলেও তিনি আপিল দায়ের করে জামিন পেতে পারেন। এ বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারায় সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ডিত ব্যক্তিকে জামিন প্রদান করা হয়ে থাকে।
যদি কোনও ব্যক্তি দায়রা আদালতে জামিন না পেয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে তিনি মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে জামিনের আবেদন করতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় হাইকোর্টে জামিন চাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কোনো আসামি গ্রেফতার হবার পূর্বে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আগাম জামিন সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রদান করা হয়। তবে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল হলে আগাম জামিনের আবেদন করার কোন সুযোগ নেই।
Criminal Cases and bail of the accused