বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইনের আলোকে ‘রিট’ হচ্ছে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন নাগরিকের মৌলিক অধিকার বলবৎ করবার জন্য অথবা সরকারি বা বিধিবদ্ধ সংস্থার সিদ্ধান্ত বা কার্য চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা একটি পিটিশন।
হাইকোর্ট বিভাগের রিট বা জুডিসিয়াল রিভিউর এখতিয়ার সংবিধান দ্বারা অর্পিত যেটির মাধ্যমে নির্বাহী বা প্রশাসনিক সংস্থার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা বা পরীক্ষা করার এখতিয়ার আদালতকে দেওয়া হয়েছে।
রিট বা জুডিসিয়াল রিভিউ হচ্ছে নির্বাহী বিভাগের আইন বহির্ভূত কার্য বা সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা।
নির্বাহী বিভাগ তাদের উপর ন্যস্ত ক্ষমতা বে-আইনিভাবে প্রয়োগ করতে পারে বা অপব্যবহার করতে পারে। হাইকোর্ট বিভাগ রিটের এখতিয়ার এর মাধ্যমে নিশ্চিত করে যে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ তাদের কার্য সম্পাদনে আইন ও বিধি মেনে চলে ও নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষিত থাকে। হাইকোর্ট বিভাগের রিটের এখতিয়ার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সংবিধানের তৃতীয় ভাগে একজন নাগরিকের ১৭ (সতের) টি মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের চুয়াল্লিশ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে মৌলিক অধিকার সমূহ বলবৎ করিবার জন্য সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করিবার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হইল।
সংবিধানের ১০২(১) অনুচ্ছেদ দ্বারা আদালত নাগরিকের মৌলিক অধিকার প্রয়োগের জন্য কোনো উপযুক্ত নির্দেশনা দিতে বা আদেশ দিতে পারেন। ১০২(২) অনুচ্ছেদে মূলত পাঁচটি শ্রেণীর রিটের কথা বলা রয়েছে, যেগুলো হল- writ of certiorari, writ of mandamus, writ of prohibition, Habeas Corpus and Quo Warranto।
১০২(২) অনুচ্ছেদ মোতাবেক যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সহিত সংশ্লিষ্ট যে কোন দায়িত্ব পালনে রত ব্যক্তিকে আইনের দ্বারা অনুমোদিত নয়, এমন কোন কার্য করা হইতে বিরত রাখার জন্য কিংবা আইনের দ্বারা তাঁহার করণীয় কার্য করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে, অথবা প্রজাতন্ত্র বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়াবলীর সহিত সংশ্লিষ্ট যে কোন দায়িত্ব পালনে রত ব্যক্তির কৃত কোন কার্য বা গৃহীত কোন কার্যধারা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে গৃহীত হয়েছে ও তাঁহার কোন আইনগত কার্যকরতা নাই বলে ঘোষণা করে হাইকোর্ট বিভাগ আদেশদান করতে পারেন।
তাছাড়াও আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে বা বেআইনী উপায়ে কোন ব্যক্তিকে প্রহরায় আটক রাখা হয় নাই বলে যাহাতে উক্ত বিভাগের নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হতে পারে, সেইজন্য প্রহরায় আটক উক্ত ব্যক্তিকে উক্ত বিভাগের সম্মুখে আনয়নের নির্দেশ প্রদান করার, অথবা কোন সরকারি পদে আসীন বা আসীন বলে বিবেচিত কোন ব্যক্তিকে তিনি কোন্ কর্তৃত্ববলে অনুরূপ পদমর্যাদায় অধিষ্ঠানের দাবী করছেন তাহা প্রদর্শনের নির্দেশ প্রদান করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে।
যিনি রিট দায়ের করবেন তার অবশ্যই মোকাদ্দমার বিষয় বস্তুর সাথে পর্যাপ্ত স্বার্থ (Locus Standi) থাকতে হবে অথবা সংক্ষুব্ধ হতে হবে। সরকারী সংস্থার সিদ্ধান্ত বা কার্য দ্বারা সংক্ষুব্ধ একজন ব্যক্তি উক্ত সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।
তবে জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের ক্ষেত্রে রিট পিটিশনার নিজে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন সেটির বিষয়ে বাধ্যবাধকতা নেই।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে সরকারী সংস্থা বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রিট দায়ের করা যেতে পারে। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে 'প্রজাতন্ত্র বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিষয়ে কার্য সম্পাদনকারী ব্যক্তি'কে বোঝায়। অতএব, সরকারী বিভাগ, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা সরকারী মালিকানাধীন কোম্পানি এবং কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে রিট দায়ের করা যেতে পারে।
যদি হাইকোর্ট বিভাগ মোশন শুনানির সময় সন্তুষ্ট হন যে রিট পিটিশনটি রক্ষণযোগ্য এবং আদালতের নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে সে ক্ষেত্রে আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে একটি রুল নিশি জারি করবে যার অর্থ হল রিটে চ্যালেঞ্জ করা কোন কার্য বা গৃহীত কোন কার্যধারা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হইয়াছে বা গৃহীত হইয়াছে ও তাঁহার কোন আইনগত কার্যকারিতা নাই বলিয়া কেন ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে কারণ দর্শানো বা জবাব প্রদানের নির্দেশকে বোঝায়।
সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে দায়ের করা রিটে অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। অন্তর্বর্তী আদেশ একটি স্থগিতাদেশ, নিষেধাজ্ঞা বা নির্দেশনা হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট